তৃনমূল-কোম্পানির নয়া খেল – সুজন চক্রবর্ত্তী

তৃনমূল-কোম্পানির নয়া খেল – সুজন চক্রবর্ত্তী

মহা মজার কান্ড যত! মানুষ বলছে – রাজ্যের হাল ফেরাতে বামেদের দরকার। পিকে’ বলছে – তৃণমূলের হাল ফেরাতে বামেদের দরকার ।বামেরা বলছে, তৃণমূল বা বিজেপি না, রাজ্যের হাল ফেরাতে মানুষের একজোট হওয়া দরকার। সেটাই হতে হবে।লোকে সব বুঝে গেছে। মুখ চেপে বলছে – ‘উন্নয়ন কোথায়? কঙ্কালসার চেহারা’। উন্নয়ন তো সব শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলার, নেতা-মন্ত্রীদের। বাড়ী গেলেই দেখা যাবে।’নেতারা ফেল। দল চালাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। সেটাও ফেল। এখন দিল্লীর কোম্পানী তৃণমূল চালাবে। মোদিজীর ভরসা যাকে, দিদিরও ভরসা তাকে। মোদিজী পাঠিয়েছেন, পিঠ বাঁচাতে ভাইপোর সহায় তিনি। পিকে’র কোম্পানী। ৫০০ না ১২০০ কোটি কে জানে? কিন্তু ব্যবসা। তৃণমূল রাজনীতির দল না, রাজনীতির ব্যবসার দল – এটা স্পষ্ট।

হাস্যকর তৃণমূল-পিকে’র বাহিনী

হাস্যকরভাবে হামলে পড়েছে পিকে’র বাহিনী। বিহার-উত্তরপ্রদেশ সহ ভিন রাজ্যের মাইনে করে নিয়ে আসা বাহিনী। বামপন্থী দেখলেই হলো। নেতা, কর্মী, বামপন্থী সমর্থক, বিশিষ্ট বামপন্থী মানুষ কিংবা বামপন্থী মননের লেখক, সাংবাদিক – দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আগে আক্রমণের জন্য, এখন দলত্যাগের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কাতর আর্তনাদ! ‘বিশ্বাস করুন, মানুষ বুঝে গেছে তৃণমূল আগাপাছতলা অসৎ, লুঠেরার দল। আপনারাই সৎ। তৃণমূলকে বাঁচাতে দলে আসুন। কি চাই। টাকা? পদ? সব দেব। মন্ত্রীত্ব? – তাতেও পারছে না পিকে’র টীম।ধুপগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক ল²ীকান্ত রায়, মমতা রায়, প্রাক্তন সাংসদ মহেন্দ্রনাথ রায় থেকে কৃষ্ণনগরের সুবিনয় ঘোষ কিংবা কলকাতার দেবেশ দাস। সর্বত্রই একই আবদার। বর্তমান বিধায়ক হরিরামপুরের রফিকুল ইসলাম থেকে চাকুলিয়ার আলী ইমরান রামিজ। অন্তত পাঁচজন বর্তমান, ৮জন প্রাক্তন বিধায়ক। গ্রাম-শহর এলাকায় আরও কত কর্মী-সমর্থক। সবার কাছে গিয়ে একটাই কাতর আবেদন। কিছুই পারছিনা – পিকে’র কোম্পানী কে বাঁচান। পিকে টাকা নিয়েছে দিদিকে বাঁচাবার, কিন্তু উপায় নেই। অতএব বাঁচান। একবার পিকে’র টীম, একবার পুলিশ, একবার তৃণমূলের তোলাবাজ- কেনাবেচার খেলায়।কোম্পানীর লোকেদের সহজ স্বীকারোক্তি। এ কাদের বাঁচাতে এসেছে তারা? তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের তো মানুষ বিশ্বাস করছে না। ঘৃণা করছে। বলছে চিটিংবাজ। চাকরীর নামে টাকা মেরেছে। পঞ্চায়েতের প্রার্থীই হোক আর দলের পদ হোক – টাকা দিয়ে কেনা বেচা হচ্ছে। আমফান ত্রানের নামে দুর্নীতি। টাকার খেলা। যে কোন সরকারী প্রকল্পে চুরি। দিনে ডাকাতি। খাল, রাস্তা, সরকারী নির্মান – রেকর্ড পরিমানের কাটমানি। প্রতিটি স্তরে। স্তর ভেদে টাকার ভাগ। মানুষের কাছে সব ধরা পড়ে যাচ্ছে। এ দল টিকতে পারে না।সত্যই তো! তৃণমূলের এত নেতা, মন্ত্রী। একটা সৎ লোক ওরা খুঁজে পাচ্ছে না কেন? আচ্ছা পিকে’র বাহিনী এটা বোঝে না যে দল বদলিয়ে তৃণমূলের খপ্পরে যে যাবে, সে তো সৎ হতে পারে না। আর মাননীয়ার রাজত্বে অজ¯্র বামপন্থী কর্মী, যাদের নির্যাতন করা হলো, মিথ্যা মামলায় জেরবার করা হলো, ভোট সহ বিভিন্ন সময়ে ঘরবন্দী করে আক্রমণ করা হলো, পিকে’র বাহিনী শেষমেষ তাদেরই ঘাড়ে পড়েছে? তাদের বাদ দিয়ে নাকি ভবিষ্যত অন্ধকার! কি অদ্ভুত আবদার!কোম্পানী লোক ধরতে নেমে পড়েছে। ঘোড়া কেনা বেচার হাত পাকানো তৃণমূল ফেল করেছে। লুম্পেন তোলাবাজী ফেল। ব-কলমে কর্পোরেট তোলাবাজীর অছিলায় ৫০০ কোটির কোম্পানী। ফেল করতে বাধ্য।

প্রহসন, না প্রতারণার আর এক নতুন কৌশল।

তৃণমূলের পুরনো লোকরা কোথায়? দলে তারা এখন ব্রাত্য। অসম্মানিত। রোজ ঘাড় ধাক্কা খাচ্ছেন। ভাইপোর বাহিনীর নামে নতুন, নব্য তোলাবাজদের রাজত্ব বাড়ছে। নেতাদের বাড়ী গাড়ীর বহরেই স্পষ্ট।দেউলিয়াপনা এতটাই যে, কোম্পানীর লোক ডায়মন্ডহারবারের বামপন্থী নেতা কর্মীদের বাড়ী অথবা অফিসে পর্যন্ত ঢুঁড়ে ফেলেছেন। কি ব্যাপার, না ১৯৫২ সালের ডায়মন্ডহারবারের সি পি আই(এম) সাংসদ প্রয়াত কমল বসুর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে হবে। ভুতুড়ে কান্ড যত, চিরকুটে সাংসদ এবং নাম লেখা আছে, ধাম তো নেই। কোম্পানীর লোক – বেচারা? বাস্তব বিবর্জিত। কি করবে এরা?কৃষ্ণনগরের বা হরিরামপুরের তৃণমূল কর্মীরা কিছুই জানতেন না। দল অথবা কোম্পানী – কেউই তাদের জানবার প্রয়োজনও বোধ করেনি, কাগজ দেখে জানছেন তারা। দল পিকে মারফত সৎ লোক চিহ্নিত করে, তৃণমূলের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন তাদের, যাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই। ওরা তৃণমূলের স্থানীয় নেতাগিরি করে। কি বিড়ম্বনা। চ‚ড়ান্ত অসম্মানের। বাড়ীতে অথবা চায়ের দোকানে বন্ধুদের কাছে মুখও দেখাতে পারছেন না – তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। বেচারা।বরং তৃণমূলের কর্মী-নেতারাই দলের পোষ্ট ধরে রাখার জন্য এখন পিকের কোম্পানীকেই মুরুব্বি ধরেছেন। তোলাবাজীর টাকার ভাগ এখন শুধু হরিশ ব্যানার্জী স্ট্রীট না, পিকে’র টীমকে নজরানা দিতে হচ্ছে। তৃণমূলের এটাই ভবিতব্য। দুর্গতি এবং দেউলিয়াপনার চ‚ড়ান্ত।

চেনা গল্পগুলো কোথায় গেল?

রাজ্যজুড়ে তখন সর্বত্র বিক্ষোভ। তৃণমূল নেতাদের বাড়ীতে যুবকের দল। চাকরীর নামে টাকা নিয়েছে, ফেরত চাই। কৃষকের ক্ষোভ – পঞ্চায়েতের টাকা লুঠ হয়েছে, ফেরত চাই। লুঠ তোলাবাজী – কাটমানি ফেরতের দাবীতে ভীত তৃণমূলের নেতারা পালিয়ে বাঁচছেন। টাকা ফেরত দিচ্ছেন। মুচলেখা দিচ্ছেন। কান ধরে উঠবোস করছেন। এমনই সেদিন।পিকের প্যাকেজ ঘোষিত হলো – ‘দিদিকে বলো।’ দিদির হয়ে ফোন ধরল ভাড়া করা কোম্পানী। দিদিকে বলা হলো না। দিদি মুশকিল আসান নয়, দিদি চারশো বিষ। গল্প ফেল। এবার নতুন প্যাকেজ। আরও দামী। বাংলার গর্ব। সেটাও বাজারে চলল না। রবীন্দ্রনাথ-বিদ্যাসাগর-নেতাজী-স্বামীজি-নজরুল-সুকান্তের বাংলায় আওয়াজ উঠল দিদি বাংলার লজ্জ্বা। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের মানুষ দেখেছেন। ওসব ছেঁদো শ্লোগান মানবে কেন? হলো না। গল্প ফেল।রাজ্য শুদ্ধু মানুষ বিপর্যস্ত। কাজ নেই। বেকারী। শিক্ষায় বিড়াম্বনা। স্বাস্থ্যে বেহাল দশা। মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছোঁয়া। মানুষ বিরক্ত। প্রলেপ লাগানোর চেষ্টায় ব্যর্থ পিকে’র কোম্পানী। উল্টে তৃণমূলের অপদার্থতাই আরও বেশী স্পষ্ট হচ্ছে।মুখ খুঁজতে পাড়ায় পাড়ায় বেড়িয়েছে কেন? জাল ফেলে মাছ ধরার ব্যর্থ চেষ্টা। জালে বড় ফুটো। গ্রামের ভাষায় ‘ঘাবলা’ তো মাননীয়া নিজেই। সম্পদ না, তৃণমূলের সবচেয়ে বড় বিপদ তো পিসি অথবা ভাইপো নিজেই। ২৯৪টা আসনে তৃমূলের তো একজনই প্রার্থী। একটাই তো মুখ। মুখ বদলাতে হলে তো বদলাতে হবে বিজ্ঞাপনের মুখকেই।

বামপন্থার বিকল্প নেই

নীতি, আদর্শ, কর্মসূচী হীন তৃণমূল। শুধু খাও আর খাও। দেউলিয়া তৃণমূল। ক্ষমতা আর মধুভান্ডের ভাগাভাগিতে তৃণমূলের বাহিনী নিয়েই এ রাজ্যের বিজেপি। তৃণমূলের ভাষা, ভঙ্গী, শ্লোগান আর মুখ নিয়েই এখনকার বিজেপি। তৃণমূল প্রাক্তনীদের নিয়েই বিজেপি। বিকল্প না, পারস্পরিক এবং পরিপুরক। একই শক্তির দুটো ভিন্ন রূপ। বাংলায় খাল কেটে বিজেপির কুমীর নিয়ে এসেছে তৃণমূল। উত্তর তো তাদেরই দিতে হবে। এই দুই শক্তির বিরুদ্ধেই মানুষের জোট -ইঙ্গিত স্পষ্ট।গণতন্ত্র, ঐক্য,সম্প্রীতিতে বামপন্থার বিকল্প মানুষের অচেনা নয়। নীতি, আদর্শ, দায়বদ্ধতায় দৃঢ় বামপন্থীরা। স্বচ্ছতা, সততা নিয়ে মানুষের ভরসা বামপন্থীরা। এরাজ্যে কৃষি, শিল্প, পরিকাঠামো, কর্মসংস্থান, উন্নয়নের প্রশ্নের দিশারী।নীতিনিষ্ট, দেশপ্রেমিক বামপন্থীরা। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী কমিউনিস্টদের। ব্রিটিশের দেওয়া ষড়যন্ত্র মামলার শিকার কমিউনিস্টরা। সেলুলার জেলে কারান্তরালে নির্ভিক কমিউনিস্টরা। সেই আপোষহীন সংগ্রামের ঐতিহ্য এবং বহমানতায় এ রাজ্যের বামপন্থীরা। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। চৌত্রিশ বছরের বামশাসনেও কেউ কখনো তাদের টলাতে পারে নি। শত ষড়যন্ত্রেও সিবিআই, ইডি, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা কেউ কখনো বাম নেতা-মন্ত্রীদের গায়ে কালির দাগ লাগাতে পারে নি। সেই ঐতিহ্যেই এ রাজ্যের বামপন্থা অমলিন।পিসি, ভাইপো, পিকে একের পর এক ফেল। তৃণমূলের কল্যানে এরাজ্যের মানুষ লুম্পেন তোলাবাজীর বহর দেখেছেন। তৃণমূলের অনুপ্রেরণায় পিকে’র কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায় এখন লুম্পেন আর কর্পোরেট তোলাবাজীর মিশেল দেখছেন। কেনাবেচার রাজনীতিতেই ওরা মশগুল। এ রাজ্যে মানুষ তাকে মানছে না। তাড়িয়ে বিদায় করছে।মানুষের বিচারে সৎ, বিশ্বাসযোগ্য, দায়বদ্ধ এবং মানবদরদী বামপন্থীরাই। এটা গর্ব। এটা শ্লাঘা। মানুষেরও। বামপন্থীদেরও। মানুষের ভরসা বামপন্থীরাই। ভবিতব্য সেটাই।।

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *